ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ, সমাজসেবক এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ১৯৪০ সালের ২৮ জুন বাংলাদেশের চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হাজী দুলু মিয়া একজন স্বর্ণকার ছিলেন এবং মা সাফিয়া খাতুন ছিলেন একজন গৃহিণী। ড. ইউনূসের পরিবার শিক্ষিত এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার ব্যাপারে সচেতন ছিল, যা তার জীবনের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
ড. ইউনূস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে, তিনি ফুলব্রাইট বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পিএইচডি করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল "অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ"। এই গবেষণা থেকেই তিনি ক্ষুদ্র ঋণের ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করেন।
তার শিক্ষাজীবনের পর তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন। তবে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময়, তিনি অনুভব করেন যে শুধুমাত্র শিক্ষাদানের মাধ্যমে দেশের দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব নয়। তিনি গ্রামের দরিদ্র মানুষদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন। এই সময়েই তিনি ক্ষুদ্র ঋণের ধারণা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন।
ড. ইউনূস ১৯৭৬ সালে তার গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন, যা দারিদ্র্য দূরীকরণে ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করে। এই ব্যাংক দরিদ্র গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে মূলত নারীদের ক্ষুদ্র ঋণ দেয়, যা তাদেরকে স্বনির্ভর হতে সাহায্য করে। গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ দরিদ্র মানুষ আত্মকর্মসংস্থান করতে সক্ষম হয়েছে। তাদের ঋণের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ব্যবসা স্থাপন করে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়েছে।
ড. ইউনূসের এই উদ্যোগ তাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক স্বীকৃতি এনে দেয়। তিনি ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্জন করেন। এই পুরস্কার তাকে বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা সম্পর্কে আরও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করেছে।
ড. ইউনূস তার জীবনে বিভিন্ন সম্মাননা এবং পুরস্কার অর্জন করেছেন। তিনি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) সর্বোচ্চ সম্মানসূচক পুরস্কার "আগ্রিকালচারাল স্ট্যাটিস্টিক্স" লাভ করেন। এছাড়াও তিনি অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
ড. ইউনূস শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে নয়, সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তিনি "সামাজিক ব্যবসা" ধারণার প্রবক্তা, যেখানে ব্যবসার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র মুনাফা অর্জন নয় বরং সমাজের উন্নয়ন। তার এই ধারণা বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং অনেক প্রতিষ্ঠান এটি অনুসরণ করছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন উদ্ভাবনী চিন্তাবিদ এবং সমাজসেবক, যিনি তার জীবনকে সমাজের উন্নয়নের জন্য নিবেদিত করেছেন। তার উদ্যোগ এবং চিন্তাধারা বিশ্বের দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বিশাল প্রভাব ফেলেছে, যা তাকে একটি বিশ্বব্যাপী আদর্শ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
0 $type={blogger}: